‘পর্দানশীন আপুর সংস্পর্শে মর্ডান তরুণী’ ডি এইচ শিশির

‘পর্দানশীন আপুর সংস্পর্শে মর্ডান তরুণী’

‘পর্দানশীন আপুর সংস্পর্শে মর্ডান তরুণী’
ডি এইচ শিশির

কোলাহল পূর্ণ আঁকা- বাঁকা রাস্তা। ব্যস্ত গতিতে চলছে নীলচে রঙ্গের একটি বাস। বাসের অভ্যন্তর মৃদু গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে আছে। কুরুচি সম্পন্ন কিছু মানুষের লালায়িত দৃষ্টি অনবরত হামলে পড়ছে এক সুন্দরী মেয়ের অর্ধনগ্ন শরীরে।

মেয়েটির নাম অহনা। সে সত্যিই খুব সুন্দরী। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সৌন্দর্যের সঠিক মূল্যায়ন করতে সে পুরোপুরি ব্যর্থ। বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে- বসে থাকা যুবক- বৃদ্ধ প্রায় সবাই দেখছে তাকে। কেউ সরাসরি দৃষ্টি ফেলছে, কেউ বা আবার পাশে থাকা পরিচিত জনের উপস্থিতিতে লজ্জালু ভাব দেখিয়ে আড়চোখে দেখছে।
মাঝেমাঝে একজন বয়স্ক মহিলা- মেয়েটির দিকে তাকিয়ে উনার চেহারায় ঘৃণার্হ ভাব ফুটিয়ে তুলছে। তারপর মনে মনে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে আবার মাথা নিচু করে ফেলছে। সবাই তামাসা দেখছে কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না বা বলতে সাহস করছে না। কারণ স্বাধীনতার অবাধ ব্যবহার কিছু প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকেও নুইয়ে রাখছে – বাদ্ধ করছে মুখে কুলুপ এটে থাকতে। ফলশ্রুতিতে বাঁধাহীনভাবে মেয়েটি অসংখ্য চক্ষুর লোলুপ দৃষ্টিতে ধর্ষীত হচ্ছে বারংবার।

মেয়েটি কানে হেডফোন গুজেদিয়ে সানন্দে একটি ছিটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মাঝেমাঝে আশপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। তাকে ঘিরে মানুষগুলোর প্রতিক্রিয়া বুঝতে চেষ্টা করছে হয়ত ।
কিছু মুহূর্ত এমনই কাটল। হঠাৎ ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বাস ব্রেককষার আগেই আকস্মিক তার গায়ের উপর ঢলে পড়ে কোমর স্পর্শ করার চেষ্টা করল একটি ছেলে।
মেয়েটি এবার বেশ হচঁকিয়ে উঠল। সারা শরীর যেন কেঁপে উঠল। ধুপ করে মুখের হাসি ম্লান হয়েগেলো।
সে ছেলেটির থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে একটু পিছনের দিকে সরে দাঁড়াল।
কিন্তু এতেও নিস্তার নেই। তার শরীরের স্পর্শ নিতে চেষ্টা করছে তার গা ঘেষে পাশের সিটে বসা মাঝবয়সী একজন লোক।
সে মনে মনে ভাবতে লাগলো মানুষের বিবেকবোধ কি বিলুপ্ত হলো নাকি!
মেয়ের বয়সী আরেকটি মেয়ের শরীরে এসে পড়তে ও যে তারা কেন কুণ্ঠাবোধ বোধ করছে না তা ও ভেবে পাচ্ছে না।

এভাবেই চলছিল আরও কিছুক্ষণ। পথিমধ্যে একটি মেয়ে উঠল বাসে।
পর্দানশীন মেয়ে। মেয়ে নাকি মহিলা- তা বলা বেশ কষ্টসাধ্য বটে। পুরো শরীর তাঁর কালো কুচকুচে রঙের বোরকা এবং হিজাবে আবরিত । হাত এবং চোখ দুটি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না ।
তাকে দেখে অহনা কেমন জানি একটা হাসি হাসল । অদ্ভুতুড়ে উপহাস্য হাসি । মনে মনে বলল আধুনিক যুগেও এমন আনস্মার্ট মেয়ে আছে! এই ভীষণ গরমের দিনেও এমন ঢুলঢুলে কালো বোরকা পরে আছে । তাও আবার তাতে সামান্য স্টাইলের বালাই নেই!

অহনা এতক্ষণ ভাবছিল এসব অযাচিত কথাগুলো।
কিন্তু তাকে আরও অবাক- বিস্ময়াভূত করিয়ে দিলো মেয়েটাকে ঘিরে বাসের মানুষের ব্যাবহার।

একটু আগে যে লোকটি তাকে ডিস্টার্ব করছিল এখন সেই লোকটিই তাকে (সেই মেয়েটিকে) নিজের সিটে জোর করে বসতে দিল। আরও কয়েকজনের চাহনি দেখে মনে হচ্ছে হয়ত তারাও মেয়েটিকে বসতে দিতে উদ্যত হচ্ছিল।
কিন্তু ও যে এতক্ষণ ধরে এখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে আর তা সবাই অদ্ভুত- লোলুপ দৃষ্টিতে দেখলেও কেউ তাকে বসতে পর্যন্ত বললো না! অথচ একটি আনস্মার্ট- ক্ষ্যাত, আধুনিক যুগের সাথে একেবারেই বেমানান একটি মেয়েকে সবাই এতো ভক্তি- আহ্লাদিত মনে আপ্যায়ন করছে।
অহনা বেশ কয়েকবার ভাবতে চেষ্টা করল তাদের মধ্যে এই বৈষম্যের পিছনে সুপ্ত কারণ।
কিন্তু না; রাগান্বিত- অস্বস্তিকর অনুভূতি তার মস্তিষ্ককে যথেষ্ট চিন্তা করার মতো ফুসরৎ দিলো না। তাই সে কোনভাবেই এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পেলো না।
কিন্তু, একজ্যাক্টলী কেন তার এবং এই মেয়েটির সাথে মানুষগুলোর ব্যাবহারে বৈচিত্র্যতা পরিলক্ষিত হলো তা জানতে, একটি কিনারা করতে সে দৃঢ়চিত্র ।

হঠাৎ তার মাথায় একটা সুন্দর আইডিয়া এলো। নিজের হিংসুটে দৃষ্টিকে বদলে ফেলে অন্য মানুষগুলির মতো দৃষ্টি ব্যবহার করে দেখতে হবে; হয়ত তাতেই ও পেতে পারে সমাধান। যেই ভাবা সেই কাজ।

কিছুক্ষণ বাদে অহনা নিজেকে শান্ত করে নিলো। দৃষ্টিকে কোমলত্বে ছেয়ে নিয়ে তাকাল মেয়েটির দিকে। এক অন্যরকম- অবর্ণনীয় অনুভূতি তাকে স্পর্শ করল তার দিকে প্রথমবার দেখাতেই।

কি অদ্ভুত!
একই চোখ, একই মস্তিষ্কের আপাদমস্তক স্ক্যানিং কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন, আলাদা আর অপ্রত্যাশিত জাস্টিস!
পূর্বাহ্ণের দৃষ্টিভঙ্গিকে ত্যাগ করাই তার মূল্যবোধে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
মেয়েটির চোখ দুটির দিকে অহনা কয়েক মুহূর্ত অপলক চেয়ে থাকলো । অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার টানাটানা স্বচ্ছ চোখ দুটি। তাছাড়া কেন জানি মন বলছে মেয়েটির সর্বাঙ্গজুড়ে প্রলেপন করা আছে কোমল এক চক্ষু শিতলকারী পবিত্রতা।
তার চোখ দেখে সে রীতিমত ঈর্ষান্বিত হতে লাগলো। এই ঈর্ষাতে কোন পাপ নেই। কারণ এর মাঝে আছে নিজেকেও পবিত্রতায় আবরিত করার মহতী আকাঙ্খা।
অহনা তাকে নিয়ে ভাবনার অস্পর্শী- অতলে ডুবে ছিল। হঠাৎ সে সম্বিত ফিরে পেল বাসের ব্রেক কষার কর্কশ শব্দে। দেখল মেয়েটি নেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর একমুহূর্ত দেরি না করে সেও বাস থেকে নেমে পড়ল।

এরপর পিছনদিক থেকে তাকে ডাক দিলো

-‘আপু’

মেয়েটি ঘুরে দাঁড়াল। এরপর সাথে সাথে অসম্ভব সুন্দর- মোলায়েম একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

-‘জি, আমাকে বলছেন?’

-‘হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। যদি কিছুটা সময় দিতেন তবে উপকৃত হতাম। কয়েকটি কথা জানার ছিল।’

-‘হ্যাঁ বলুন।’

‘পাশেই বসার মতো একটি কফি হাউজ আছে। যদি কিছু মনে না করতেন তবে আমরা সেখানে বসে কথা বলতে পারি।’- বলল অহনা।
উনি কিছুটা ইতস্তত করলেও একটু চিন্তা করে বলল, ‘আচ্ছা, চলুন।’

চারিদিক সুন্দর চেয়ার পাতা; মাঝখানে একটি করে চারকোণা টেবিল। টেবিলের উপর রাখা একটি করে কৃত্রিম ফ্লাউয়ার ভার্স। বাইরের থেকে ভেতরের অংশভাগ আরও বেশি পরিপাটি করে সাজানো। মুখোমুখি দুইটা চেয়ার টেনে বসলো বসল দুজনা। মেয়েটির মনে দোলা দিতে লাগলো পুঞ্জিভুত কৌতূহল।
নীরবতা ভাঙলো অহনা নিজেই। শুরুকরল বলতে..

‘আমি অহনা, বলে হাত বাড়িয়ে দিলো।’

– ‘আমি ফাতেমা মেহজাবিন।’ উত্তর দিলো মেয়েটি।

– ‘হ্যাঁ আপু, যা বলছিলাম। বাসের মধ্যে আমি অনেক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে ছিলাম। সবাই আমার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। কেউ কেউ আবার স্পর্শ করারও চেষ্টা করছিল, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে বলেনি বসতে। অথচ আপনি যখন এসে দাঁড়ালেন তখন আমি স্পষ্ট দেখেছি তাদের চোখে কামনা বা খারাপ অভিসন্ধি ছিলনা বরং ছিলো নমনীয়তা, শ্রদ্ধা আর নিম্নগামী দৃষ্টি।

একটু থামল, তারপর আবার বলতে আরম্ভ করল, ‘আমি জানতে চাই আমাদের সাথে কেন এই আচরণগত পার্থক্য ঘটলো?’

মেয়েটি হয়ত হিজাবের মাঝেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাইরেথেকে তা অনুভূত হলেও দেখা গেলনা। কিছুক্ষণ সময় নিলো তারপর বলল

– ‘বোন, আমার মন বলছে তোমার সাথে ঘটা এই সবকিছুর পিছনে রয়েছে বেপর্দা চলা- ফেরা। আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত বিধান লঙ্ঘন করা।’

– ‘শুধুই কি পর্দা? কেন পর্দা করতে হবে?
একটি মেয়ের উপর ইসলাম যা চাপিয়ে দিয়েছে আপনার কি মনে হয় না তা এক্সট্রা বাড়াবাড়ি? আমার মনে হয় এর মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়।’

মেয়েটা কয়েকমূহুর্ত স্তব্ধ থাকলো তারপর বললো, ‘না এর জন্য শুধুই পর্দা দায়ী তা নয়, কিন্তু পরোক্ষভাবে তা ধরতেও দোষ নেই। সমাজে বিশৃঙ্খলার জন্য পর্দার সাথে সাথে প্রয়োজন নৈতিকতা। যা আসে ধর্মীয় বিধানাবলির পূর্ণ অনুকরণের মধ্য দিয়ে। যখন কেউ পর্দা করে তখন তার মনে আন্দোলিত করে পবিত্র এক স্নিগ্ধতা। অদৃষ্ট থেকেই চলে আসে স্রষ্টার জন্য নিঃসীম কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা আর সম্মান। আর মন থেকে দূর হয়ে যায় পাপাচারের ভয়ংকর নিকৃষ্ট লিপ্সা। আর এটা একবিন্দু পরিমাণেও বাড়াবাড়ি নয়, বরং এর মধ্য দিয়েই একটি মেয়ে তার ব্যক্তিত্ব- অমূল্য সম্ভ্রম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে। নিজেকে আড়াল করতে পারে সমাজের অণু- পরমাণুতে জমে থাকা নিষ্কণ্টক নগ্নতা থেকে।

আর আপু তুমি ভুল বললে ইসলাম পর্দা চাপিয়ে দেইনি আর একটুও বাড়াবাড়ি করেনি । খেয়াল কর, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে তা পৌঁছেছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তাই একটি সুন্দর জীবন গঠন করতে কোন পথে হাটতে হবে, কি করতে হবে, কেমনভাবে করতে হবে তা শুধু দেখিয়ে দিয়েছে মাত্র। এই মানা না মানার ক্ষেত্রে সাধীনতা লুণ্ঠন করেনি বরং লুণ্ঠিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছে। চায়লে তুমি মানতে ও পার আবার না ও পারে।

এখন তুমি আমি সবাই যদি তা মেনে নিয়ে স্রষ্টার সেই প্রদর্শিত পথে চলি, সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করি তবে তা একসময় সমষ্টিগতভাবে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব আনতে সক্ষম হবে। আমাদের সুন্দর পৃথিবিটা ভরে উঠবে আরও বেশি সুন্দরতায়।’

থামল ফাতিমা মেহজাবিন। তার কথাগুলো এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল অহনা। কথাগুলো শেষ হলে তার ঘোর কাটে। বিস্ময় থ হয়ে আছে সে। মুহূর্তেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল আনন্দের ঢেউ খেলে গেল বুকের ভিতর। সে কথা বলতে পারল না আরও কিছুক্ষণ । নীরবতা ভাঙল ফাতিমা মেহজাবিনের কথায়। মুখে একটুকরো হাসির রেখা এঁকে সে বলতে লাগলো।

‘আপু, তুমি কি খেয়াল করেছ? তোমার পোশাকের মাঝেই রয়েছে নগ্নতার ছাপ। যা পুরুষদের আকর্ষণ করে। জাগ্রত করে যৌন ক্ষুধা। আর এমনটি যখন ঘটে- তখন অনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কের কিছু মানুষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে; এর ফলে তারা যা কিছু করতে পারে। এমতাবস্থায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ছেলেটির কিন্তু সামাজিকভাবে বেশি ক্ষতি হয় না কিন্তু একটা মেয়ের জন্য তা ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ভাবে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

– ‘কিন্তু আপু, এখন তো সবাই ই এমন পোশাক পরে। তাছাড়া আমার পরিবার থেকেও কখনও এর জন্য সতর্ক করেনি বরং আধুনিক- আল্ট্রা মর্ডাণ একটি মেয়ে হয়ে গড়ে উঠতে যতরকম উৎসাহ প্রয়োজন তা পেয়েছি পরিবার, বন্ধু- বান্ধবের নিকট থেকে।’ -বলল অহনা

– ‘হ্যাঁ, খারাপ কাজে উৎসাহ- অনুপ্রেরণা বেশিই থাকে। অবশ্য তার বিপরীতও ঘটে যদি ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন- আল্লাহভীরু একটি পরিবারে জন্ম নেওয়া হয় অথবা অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গির বন্ধু- বান্ধব ও শুভাকাঙ্খী থাকে তবে।’

– ‘আপু, আমি এমন সঙ্গ বা পথ প্রদর্শক হিসেবে কাউকে পাইনি। তাছাড়া কখনও এর বিপরীত মুখি চিন্তাও মাথায় আসেনি যে এরজন্য বিপদে পড়তে হতে পারে!’

– ‘তুমি না মুসলিম?’

– ‘জি আপু’

– ‘একজন মুসলিমের জন্য এটি জানা অত্যাবশ্যকীয়। তাছাড়া এমন নগ্নভাবে চলা- ফেরা করা মানে এহকাল- পরকাল দুই জায়গাতেই নিজেকে বিপদে ফেলা। এর জন্য দুনিয়াতে তো তোমাকে সমস্যাসঙ্কুলতায় পড়তেই হবে সাথে আখেরাতেও দাঁড়াতে হবে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখে।’

তাঁর কথাশুনে অহনার ভ্রু কুঁচকে উঠলো। সে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত- নমনীয় কণ্ঠে জানতে চাইলো

– ‘আপু, দয়াকরে আমাকে বলে দিন কিভাবে আমি নিজেকে শুধরে নিতে পারি? আর আমি যদি শুধরে যাই তবে কি আমি জবাবদিহিতা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি?
স্রষ্টা কি আমাকে ক্ষমা করবেন?’

– ‘আমার জানামতে এই নগ্নতা থেকে মুক্তির একটিই উপায় আছে আর তা হলো ইসলামে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করা। আর মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তার একটি বান্দা- বান্দি যদি নিজের ভুল স্বীকার করে তওবা করে, তার পথে ফিরে আসে তবে তিনি ততটাই বা তার চাইতেও বেশি খুশি হন; যতটা খুশি হন একজন মা তাঁর হারানো সন্তান ফিরে পেলে।’

তাঁর কথাশুনে অহনার মুখ উজ্জ্বলিত হয়ে উঠলো! এক অন্যরকম পবিত্রতার অনুভূতি বয়েগেলো সারা শরীর জুড়ে । সে উৎকণ্ঠি হয়ে জানতে চাইলো – ‘আপু, আমি কিভাবে ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করতে পারি?’

অহনার মনে হল তার প্রশ্নটি শুনে মেয়েটির চোখে অবর্ণনীয় এক স্নিগ্ধতা ভর করল। স্বভাবত কিছুক্ষণ থামলো তার পর বলল,

– ‘ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণ প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। কারণ বলা হয় একমাত্র নামাজই পারে সকল খারাপ- অযাচিত কাজ থেকে দূরে রাখতে এবং একজন মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব জাগ্রত করে তাকে সুমহান প্রভুর ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি লাভ করাতে। এজন্য প্রথমত তোমাকে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাইতে হবে তারপর সর্বস্ব দিয়ে আত্মনিয়োগ করতে হবে পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহণে। যদি তা পার, তবে নিশ্চয় তুমি সফল হবে। এমনটাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন।

মেয়েটির কথাগুলো শুনে অহনার স্নায়ুতন্ত্রী জুড়ে উষ্ণ স্রোত বয়ে গেলো। এই প্রথমবারের মতো মনে হলো তার এই পোশাক সত্যিই সঙ্কুল। সারাজীবন করে আসা ভুলের স্তূপ তার সামনে অদৃশ্যেই জমা হতে লাগলো। তার মনে হতে লাগলো তার পরিহিত পোশাক সত্যিই ডিজিটাল- স্মার্টনেসকে নয় বরং পাপাচারকেই সাপোর্ট করে। আসলেই তো চারিদিকে মানুষের এই চারিত্রিক ভঙ্গুরতার মধ্যেও যে মেয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে এতো শক্তভাবে পর্দায় আবৃত করে এই চেনা পৃথিবীর সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে সেই তো সত্যিকারের স্মার্ট।’

এক অখণ্ড নীরবতা আচ্ছন্ন করল তাদের। অহনার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াল। জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। তারপর বলতে লাগলো

‘আপু, আমি -আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আপনাকে বোঝাতে পারবনা আমার বুকের মধ্যে কেমন কেমন খুশির ঝড় উঠেছে। জীবনে প্রথমবারের মতো আমি এমন খুশির স্বাদ আস্বাদন করছি যা এককথায় অবর্ণনীয়! আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন আলোর পথ। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি সেই পথের পশরা… তার শেষ কথাটির সাথে একরাশ উচ্ছ্বাস ঝরে পড়লো।

ফাতিমা মেহজাবিনের চোখেও জ্বলজ্বল করছিল একখন্ড কোমল আলোর দীপ্তি।
মুখ থেকে অস্ফুটভাবে একটি কথায় বের হয়ে এলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌!’

Share with Friends

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top