গল্প : পরিবর্তন – ডি এইচ শিশির

পরিবর্তন গল্প : পরিবর্তন

লেখক : ডি এইচ শিশির

পশ্চিম আকাশে কালোমেঘ গর্জন করছে । মৃদুলা বাতাসে জড়িয়ে থাকা হীম শীতলতা হয়ত জানান দিচ্ছে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে আসার আগমনীবার্তা। তা আচ করতে পেরে জানালার কাচ নামিয়ে দিয়ে একটু দূরে উল্টো পথের দিকে প্রসারিত দৃষ্টি মেলে থাকা শিশিরের উদ্দেশ্য করে রফিক বলল, ‘স্যার, তাড়াতাড়ি গাড়ীর মধ্যে আসুন নয়ত ভিজে যাবেন তো ।’

‘রফিক, তুমি গাড়ী নিয়ে চলে যাও। আমার ফিরতে হয়ত একটু দেরি হবে । তুমি আম্মাকে বলে দিও ।’ দূর দিগন্তে চোখ রেখেই বলল শিশির।

‘স্যার এই বৃষ্টি ভীষণ ভয়ানক। ভিজে গেলেতো আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন । আর মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সমস্যা আপনার হতে পারে ।’

‘উহ্ রফিক, কথা বাড়াবেনাতো । তুমি চলে যাও আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা । আমাকে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে । যার যার আমানত প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । তুমি বুঝবেনা কাঁধে আমার অনেক বেশি দায়িত্ব ।’ কয়েকমুহূর্ত থামল। তারপর তর্জনী দিয়ে সামনে ইশারা করে বলল, ‘আচ্ছা রফিক দেখ, ঐ যে দূরে একদল দিনমজুর কাজ করছে। বলতে পার তারাও কেন তোমার মতো এই একই চিন্তা করছে না? কেন তারা ভয়ে কাজ ফেলে উঠে আসছে না?’

রফিক কতক্ষণ নির্বাক চেয়ে রইল সেদিকে। তারপর বলল, ‘স্যার, তারা হলো দিনমজুর দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। একদিন কাজ না করলে হয়ত তাদের পরিবারবর্গকে না খেয়েই দিন কাটাতে হবে, তাই নিরুপায় হয়েই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের চোখে ভয় বলে কিছু যদি থেকেথাকে তাহলে হয়ত তা হলো তাদের ছোট্টছোট্ট ছেলেমেয়ের অনাহারী ছলছলে দৃষ্টি। তাই কাজই মুখ্য বাকি সব গৌণ তাদের কাছে।’

উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শিশিরের চোখ দুটি। হয়ত কাঙ্খিত উত্তরই পেয়েছে সে। সপ্রশংসক দৃষ্টিতে তাকাল রফিকের দিকে। বলল, ‘এক কঠিন বাস্তবতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে তুমি। আমার উত্তর ও এর মধ্যেই রয়েছে। তুমি জানো না রফিক, এক দুর্লঙ্ঘ্য গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে আসীন হয়ে আছে যার প্রতি আমি অবহেলিত। কিন্তু তা কতটুকু পালন করতে পারব তার উপরই নির্ভর করছে আমার পরকাল। তাই আমার অবস্থা আজ ঐ দিনমজুরগণের চেয়েও অতিশয় খারাপ। যাইহোক এতসব তুমি বুঝবেনা। তুমি এখন যাও, রফিক। সাবধানে যেও।’
কথা শেষ করেই হাঁটতে আরম্ভ করল শিশির।
সেদিকে তাকিয়ে আছে রফিক।

এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো শিশির খাঁন এবং তার ড্রাইভার রফিকের মাঝে ।
উপায় না পেয়ে রফিক খালি গাড়ি নিয়েই বাসার পথ ধরলো। হঠাৎ তার মুখে ফুঁটে উঠেছে বিজয়ীর এক চিলতে প্রশান্তচিত্ত হাসি। রফিক এটাই কামনা করছিল যে শিশির তাঁর কাঙ্খিত গন্তব্যে যাক। কিন্তু তাকে সাথে নিলে আরও বেশি খুশি হত। নিলো না। তবুও রফিক দুইহাত তুলে ধরলো দয়াময় আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে। ওঁ যেন নির্বিঘ্নে সেখানে পৌঁছাতে পারে সেজন্য প্রার্থনা করল। আর শিশির পা বাড়াল রেল লাইনের ওপারের বস্তির দিকে।

টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি একত্রিত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার গাল বেয়ে । আর তার নির্লিপ্ত চোখ এদিক ওদিকে নিগুড় পর্যবেক্ষণ করে ফিরছে রাস্তার আশে- পাশের নিঃস্ব-অসহায় মানুষ গুলির মর্মন্তুদ কর্মকান্ড।
খুব কাছ থেকে ও অনুভব করতে চেষ্টা করছে তাদের কষ্টগুলো। তাদের কষ্ট দেখে বুকের মধ্যে কোথাও হাল্কা মোচড় দিয়ে উঠলো। শিশিরের জন্য এই অনুভূতি একদম নতুন। নতুন কেন তা পরে বলব। সে একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের ঘর্মাক্ত মুখ পানে তাকাল । বৃষ্টিজলের মধ্যেই ঘর্মাক্তকলেবরে দিনমজুর মানুষগুলো কাজ করছে। শিশির আশ্চর্য হলো তাদের মুখে ক্লান্তিহীন এক অনন্য প্রশান্তির হাসি দেখে। হেসে হেসে কথাবলছে তারা। মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে এলো তাদের মতো ধনি শ্রেণীর মানুষগুলোর কথা যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে সময় কাটায়। কিন্তু মুখে কখনওই এমন নির্মল, অনাবিল হাসির শোভা দেখেনি শিশির।

বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে গেল ওর চেহারা। এলোমেলো চিন্তারা ভীড় করছে স্মৃতিপটে।
কিছু দূর আসতেই ওর নজরে এলো এই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রাস্তারপাশে রিকশার হুড তুলে একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক কোনরকমভাবে বৃষ্টি থেকে বাঁচার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছে। শিশির উনার কাছে গিয়ে সালাম দিলো। বৃদ্ধ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘স্যার, অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর যাত্রী হিসেবে আপনাকে পেলাম। কিন্তু দেখুন বয়স হয়েছে তাই ঠাণ্ডাজনিত কারণে বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা। তবুও চলুন। গরীবের আবার বৃষ্টিজল!’ বৃদ্ধ তার সিটে বসতে যাচ্ছিল, বাঁধা দিল শিশির। তারপর তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে কথা শুরু করল। বিভিন্নরকম কথা। একটা পর্যায় পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কিত কথা জানতে চায়লো। আরও কতক্ষণ কথা বলে সেদিনের মতো বাসায় ফিরে এলো। শিশির ফিরছিল আর বৃদ্ধ বিস্ময় বিমোহিত নয়নে সেদিকে চেয়ে ছিল।

পরদিন হাফ বেলা অফিসের কাজ করে একাই চলে এলো সেখানে। গতকালের সেই বৃদ্ধের কাছথেকে জেনে নেওয়া ঠিকানা তার গন্তব্য।

রেলপথের পাশদিয়ে সারি সারি ছোট ছোট খুপছি ঘর। দুইপাশে ঘরবাড়ী আর তার মাঝ দিয়ে এঁকেবেকে গেছে একটা সরু রাস্তা ।
রাস্তার মাঝে মধ্যে বড়বড় ভাঙা গর্ত। তাতে জমে আছে কতক বর্ষার জল আর তা ঘিরে বন বন করে উড়ছে মশা মাছি। এখানে ওখানে স্তূপ আকারে রাখা আছে ময়লা-আবর্জনা।
হাঁটছে শিশির মাঝে মাঝে দমকা বাতাসে হঠাৎ করেই নাকে এসে লাগছে বিকট দুর্গন্ধ।
এর আগে কখনো সে এমন পরিস্থিতির সামনে দাড়াইনি তবুও কোন এক অদৃশ্য নিশ্চয়তা তাকে সব বাঁধা উপেক্ষা করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। হৃদয়ে যেন আছড়ে পড়ছে অবিশ্রান্ত ঝর্ণার মতো প্রশান্তির কল্লোল ধারা।

আরো একটু ভিতরে প্রবেশ করতেই সে দেখলো বস্তির ছেলে-মেয়েরা তার পিছুপিছু আসছে আর একে অন্যকে দেখিয়ে বলছে,
– ‘এই দেখেছিশ লোকটার গা থেকে কত সুন্দর সুগন্ধ আসছে।’

তার কথায় পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে মুখে অনিন্দ্য হাসির রেখা টেনে বললো, ‘হবে না, উনি মনে হয় অনেকদামী সেন্ট মাখে । বকুলতলার মোড়ের দোকানে টিভিতে দেখায় । এরকম দামী জামা গায়ে দেওয়া লোকেরা মাখে আমি দেখেছি ।’

শিশির তাদের কথাই পিছু ফিরে তাকাই তারপর বাচ্চা দুটির মুখে আলতো স্পর্শ করে নাম জানতে চায়লো ।

বাচ্চা দুটিও হাসতে হাসতে নিজেদের নাম বলল। তাদের ফোকলা দাঁতের অনিন্দ্য হাসি দেখে খুশিতে নেচে ওঠে ওর মন। কথা শেষ করে বাচ্চা দুটি নিজেরা নিজেরা কথা বলতে লাগলো কিন্তু শিশিরের দৃষ্টি তখন অন্য দিগন্তে ।

ও ভাবতে শুরু করলো। অন্যরকম ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করতে লাগলো। সাঁ করে মনে পড়েগেল ছোট বেলাতে পরিবার থেকে পাওয়া ভ্রান্ত ধারনা গুলো ।

শিশির তখন অনেক ছোট। বাসা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাসা এই ছিলো তার চেনা পৃথিবী । চার দেয়ালের বন্ধঘরের অদৃশ্য বন্ধীর জীবন ছিলো ছোট্ট শিশিরের।

সে কখনো বাইরের জগতে মন খুলে বিচরণ করেনি। কখনো পায়নি সবুজ ঘাসে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশিরের স্পর্শ। কখনো পায়নি বিশাল দিগন্তের দর্শনি । এজন্য তাকে যা যতটুকু বোঝানো, শেখানো হয়েছে তার চিন্তাজগৎ ততটুকুর মাঝেই সিমা বদ্ধ ছিল। মুক্ত চিন্তার কোন অবকাশ ছিলনা ।

তার পরিবার বাংলার দশটা সেরা পরিবারের একটা। এজন্য সে বাইরের আনস্ট্যান্ডার্ড ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কে একে বারেই আইডীয়ালেসভাবে গড়ে উঠেছে । ধনে- জনে প্রতিপত্তি থাকলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার পরিবার সায়াহ্নের কালো আঁধারে নিমজ্জিত ।

তারই ফলশ্রুতিতে তাকে শেখানো হয়েছে গরীব নামের সংক্ষিপ্ত অর্থ। সে শৈশব থেকেই এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছে যে গরীব অসহায় মানুষগুলো খুব দুধর্ষ। তারা মাত্র এক মুঠো অন্নজলের জন্যে মানুষের জীবন পর্যন্ত অনায়াসে নিয়ে নিতে পারে। তাদের হাতের নাগালেই নাকি থাকে জীবন- মৃত্যুর মেলবন্ধন। এমনই সব ভ্রান্ত ধারণা তার মন- মননে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। একথা শুনার পর থেকে তার চিন্তা শুধু একটা সমীকরণ মেলাতে থাকে, ‘একমুঠো খাবার তো আমরা খুব সহজেই ডাস্টবিনে ফেলে দিই। কি হবে একবেলা না খেলে?
আমি খেতে চাইনা বলেই তো আম্মা প্রতিদিন রাগ করে। আর সেই একমুঠো খাবারের জন্য গরীবলোকগুলো কিনা একটা তরতাজা জীবন এক নিমিষে নিস্তেজ করেদিতে পারে! যারা এমনটা করতে পারে তারা নিশ্চয় অসভ্যতা আর বর্বরতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেছে।’

তার সঙ্কীর্ণ ভাবনা-চিন্তা এখানেই মিলিয়ে যায় কিন্তু এই বিশ্বাসটা তখন থেকেই তার হৃদয়ে গেঁথে যায়। মূল কথা হলো, একবেলা দুই বেলা নয়, একাধারে তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা যে ভোগ করেনি। সে কেমন করে বুঝবে অনাহারীর ক্ষুব্ধতা? তার চিন্তা কখনওই ভুক্তভুগির বাস্তব অভিজ্ঞতা স্পর্শ করতে পারবেনা।

এরপর, আজ সে বড় হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার ব্যবসার হালও ধরতে হয়েছে তাকে। ছোট্ট শিশির আজ বুদ্ধি- বিদ্যায় ও অনেক বড় হয়েছে কিন্তু তার মনে গরীবদের প্রতি সেই ঘৃণ্য দৃষ্টি রয়েই গেছে। সে তাদের গরীব শ্রমিকদের কথা কখনওই মনোযোগ দিয়ে শুনতনা। কখনো উপলব্ধি করতে চায়তনা তাদের দুঃখ। সব সময় তাদের থেকে দূরে দূরে থাকতো।

এরই মাঝে এলো শিশিরের জন্মদিন। সারাদিন বাসায়, অফিসে নানান পার্টি, অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিনের সমাপ্তি ঘটে আর নেমে আসে রাতের ঘনীভূত আঁধার। জমকালো ঝাড়বাঁতীর দ্যুতিতে সে আঁধার সহস্র ক্রোশ দূরে চলে গেলো। ঝলমলে হয়ে উঠলো সবকিছু।

জন্মদিন উপলক্ষে প্রচুর উপহার জমা হলো। নানান জনের নানানরকম উপহার।
স্তূপাকার দামী দামী উপহারের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার নজর কাড়ল সস্তা পেপারে মোড়ানো নীল রঙের একটা উপহার প্যাক। তার উপর রাখা আছে একটা টাটকা গোলাপ ফুল। হয়ত কেউ এখনই, এইমাত্র রেখে গেছে। ফুল থেকে যেন রাতের স্নিগ্ধ শিশির চুইয়ে পড়ছে। ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের উপর ঝাড়বাতির আলোকরশ্মি পড়ে মুক্তার মতো চিকচিক করছে। ফুলটা তুলে হাতে নিল শিশির। ভালো লাগার এক প্রস্রবণধারা বয়েগেল তার বুকের মধ্যে।

বেনামি উপহারটি হাতে নিল। হাতে তুলে নিয়ে বেশ কৌতূহল নিয়ে খুললো সেটা। দেখল, দুইটা বই আছে তার মধ্যে । ড্রিংক করার কারণে সে কিছুটা অস্বস্তি অনূভব করছিল তাই ঘোরের মধ্যেই কিছুটা রাগে বইগুলো দূরে ছুড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই কয়েকটি অক্ষরের দিকে চোখ পড়াতে ও চমকে উঠল। হাত দুটি স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে বই দুটি জড়িয়ে ধরল বুকের সাথে। আমরা বাঙালীরা আর যাইহোক আরবী লেখা দেখলে বেশ সতর্কীকৃত ভাবে তা সংরক্ষণ করি এই ভেবে যে, এর সাথে অসদাচরণে আল্লাহ্‌ রাগান্বিত হবেন। তখন ‘আবার হাত পা পচে টচে যায়কিনা!’
সেও চোখেমুখে কতক সেইরকম এই ভীতি নিয়েই বইটা সযত্নে মাথার কাছে রেখে নিদ্রা গেলো ।

কি জানি কি হলো? রাতের মধ্যপ্রহরে শিশিরের ঘুম ভেঙে গেলো। চারিদিক নিশুতি নীরবতা । হঠাৎ করে ওর দৃষ্টি গেল বালিসের দিকে। অনুভূত হলো জাজ্বল্যমান একটা বইয়ের নাম ‘ইসলামি অর্থনীতি এবং যাকাত’ । বিষয়টা স্বাভাবিক হলেও ও অকস্মাৎ চমকে উঠলো।

‘ইসলাম মানে তো জানতাম শুধু নামাজ-কালাম, যিকর-আজগার, তসবিহ-তাহলীল কিন্তু আজ দেখছি ইসলামি অর্থনিতী! এটা আবার এলো কোথা থেকে? প্রনয়ণই বা করলো কে? ভারি জটিল প্রশ্নতো! আগে তো এমনটা দেখিনি।’
মনে মনেই কথাবলে উঠল শিশির। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল। ও প্রচন্ড বইপোকা স্বভাবের অফিসেরছুটির সময়গুলো কাটে বইপড়ার মধ্য দিয়ে। তাই এমন নতুন ধাচের বই পেয়ে জগতের সব কৌতূহল নিয়ে বইটি হাতে নিল।

ও কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মোড়কের দিকে চেয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে মেলতে লাগল পৃষ্ঠা। পড়ছে শিশির। একলাইন, দুইলাইন, তিনলাইন; একপৃষ্ঠা, দুইপৃষ্ঠা তিন পৃষ্ঠা..! আগ্রহ যেন বেড়েই চলেছে। কোন এক অদৃশ্য আকাঙ্খা তাকে বইয়ের মাঝে ডুবিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। প্রতিটি শব্দগুচ্ছ পর্যন্ত গভীর মনযোগ সহকারে পড়তে লাগলো ও। অনেকক্ষণ ধরে পড়ল।

পড়ার এক পর্যায় তার মনের আকাশ ভয়ের নিকষকালো আঁধারে ছেয়ে গেলো। রাজ্যের চিন্তারা এসে ভিড় করল তার স্নায়ুতে। মাথার উপর অনবরত ঘুরছে ফ্যান। মিডিয়াম কাঁটায় চলছে এয়ারকণ্ডিশন কিন্তু তা শর্তেও ওর পশমের গোড়া দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেরহয়ে আসতে লাগল। আজ সে যা পড়লো তা সত্য হলে তার পূর্বপুরুষগণ হয়ত এত দিন জাহান্নামের কোন অন্ধকারে দিনযাপন করছে; ভাবছে শিশির।
সে এবং তার গরীব মানুষদের সাথে কোন ভাবেই মনখুলে মেলামেশা করেনা। কিন্তু বইয়ের ভাষা বলছে তাদের কৃতকর্মে বিপরীত। বলা হচ্ছে ধনী- গরীব নির্বিশেষে সবার সাথে উত্তম সম্পর্ক গড়ার কথা; কিন্তু তারা তো সবসময় ওঁদের এড়িয়ে চলে। তাছাড়া শিশিরের পূর্বপুরুষদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিতি ছিল উপচিকীর্ষার ।

অজানা ভয় তাকে আড়ষ্ট করে ফেলছে। নিশুতি রাতের নীরবতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বেশি বিগলিত হয়ে নুইয়ে পড়ছে ওর হৃদয়। পূর্ণিমাচাঁদের মুখে এক ফোঁটা আঁধারের প্রলেপ এঁকে দিলে যেমন আদিগন্ত জুড়ে মুষড়ে পড়া- বিধস্ততা প্রতীয়মান হতো তেমনই হয়েছে ওর শান্ত- সরল মুখখানি ।

হঠাৎ আঁধারের বুকে এক ফোঁটা আলোকরশ্মির মতো হয়ে উঠলো ওর চেহারা। ছড়িয়ে গেল এক পবিত্র উজ্জ্বলতা।
মনে পড়ে গেল রফিকের বলা কথাগুলো। শিশিরের এক কঠিন বিপদের দিনে রফিক তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল যে, ‘যখন পৃথিবীর সমস্ত দরজা কারো জন্য বন্ধ হয়ে যায় তখনও তার জন্য খোলা থাকে মহান রবের সুপ্রসন্ন দরজা। তার মতো দয়ার আর কেউ নেই। তিনি মানুষের জন্য অনুগ্রহ করাকে নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিয়েছেন। এজন্য যতবার তিনি ভয়ঙ্কর শাস্তিবিধানকারীরূপে আসার কথা বলেছেন ততবারই তার পাশে রহিম, রহমান নামক গুণবাচক নামগুলিও ব্যবহার করেছেন। এজন্য বিপদে ভয় না পেয়ে প্রভুকে ডাকবেন; উনিই একমাত্র যাবতীয় বিপদকালে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।

সে একদিন আরও বলেছিল আল্লাহ্ তায়ালা সবচাইতে খুশি হন তখন, যখন সত্যপথ বিচ্যুত কোন বান্দা তাঁর পথে ফিরে আসে; নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর যে ভুল করে নতমস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে পছন্দ করেন।’
ড্রাইভার রফিকে সেই কথাগুলোই আজ ওর দুচোখে আশার আলোর হয়ে ধরা দিলো।

এই নিস্তব্ধ রাতে তার খুব বেশি স্মরণ হতে লাগলো আল্লাহ্ তায়ালাকে। অকপটে নিজের এবং পূর্বপুরুষদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা আর অনুগ্রহ চাইতে লাগলো। সে ভাবতে লাগলো, কি করল তার পরিবার! এমন চরম সত্যকে তারা কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারল? শিক্ষা দীক্ষায় অনন্য ছিল তার পূর্বপুরুষ। তবুও তারা সত্য দ্বীন, দ্বীনের চাওয়াগুলো বুঝতে পারল না! অস্ফুট এক আর্তনাদ বের হয়ে এলো বুকচিরে।

হঠাৎ ওর মনে অজানা ভয় এসে বাসা বাঁধতে লাগলো। ভাবতে লাগলো, সত্যিইতো মানুষে দ্বারা একটি সেকেন্ডের ও তো গ্যারান্টি নেই। তাহলে যদি আমি এইমুহূর্তে মৃত্যুবরণ করি!
তাহলেতো আমার সাথে একটি কানা কড়িও নিয়ে যেতে পারবনা। তখন এত ধন দৌলত খাবে কে? আমার আহল- পরিজন এই সম্পদ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে যার যার মতো করে হেসে খেলে জীবন পরিচালনা করবে।
কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাচ্ছি? অথবা পাব? বইয়ের কথাগুলিকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে ফলাফল আসবে যে, আমার রেখে যাওয়া বংশধররা যদি বিন্দুমাত্র ভাল কাজ করে তাহলে তা যেমন আমার আমলনামাই যোগ করা হবে ঠিক তেমনি ভাবে তাদের শস্যকণা পরিমাণ খারাপ কাজের ভাগও বাদ যাবেনা।
মৃত্যুরপরে আমার রেখে যাওয়া ধন- সম্পদ বিষাক্ত সর্প হয়ে আমাকে দংশন করবে!
কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
সেই একটি সাপ যদি দুনিয়ার বুকে একবার নিঃশ্বাস ফেলে তবে অনন্তকালের জন্য কখনওই আর সবুজ গাছপালা জন্মাবেনা!

ভয় যুক্ত অনুশোচনায় মাথা নুইয়ে পড়ছে তার। তাই অশ্রু সজল আঁখি নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ জানাতে লাগলো, ‘হে প্রভূ আমাকে অন্তত এই ঋনের বোঝা থেকে মুক্তিপাওয়ার আগপর্যন্ত দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিওনা। আমার পরিবার সারাজীবন ভুল করেছে কিন্তু আমি আর তা করতে চাইনা। দয়াকরে আমাকে সুযোগদানে বাধীত করুণ।’

যাকাত না দিলে মহান আল্লাহু তায়ালা মানুষকে শাস্তি দিবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। সে ভাবতে লাগল কী এই যাকাত? যা আদায় না করলে মহান প্রভূর নিকট এমন অবশ্যম্ভাবী ভাবে জবাবদিহিতা
করতে হবে।
কেন দিতে হবে?
কী করা হবে এই টাকা দিয়ে?
কাকেই বা দিতে হবে?
একের পর এক প্রশ্ন এসে তার মস্তিষ্কে ট্রাফিক জ্যাম বাঁধাতে লাগলো। সে মাথায় হাত দিয়ে বেডের উপর বসে পড়ল।
হঠাৎ তার খেয়াল হলো পাশে রাখা দ্বিতীয় বইটির কথা। সাথে সাথে ছোঁ মেরে বইটি হাতে তুলে নিলো। চরম উৎকন্ঠা নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগল । এক পৃষ্ঠাই এসে তার চোখ আটকে গেল অনন্য প্রাপ্তিতে উজ্জ্বল উঠলো চোখ মুখ। এই পাতাই সব কিছু
আল-কোরআনের রেফারেন্সে লেখা। সে তার উপরোক্ত প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তরগুলো ক্রমান্বয়ে সাঁজালো শিশির।

‘যাকাত হলো এমন একটা অর্থ ব্যাবস্থার মূলনীতি যা প্রণয়ন করেছেন সয়ং সৃষ্টিকর্তা । ধনী ব্যক্তিগণ যাকাতের মাধ্যমে প্রভূর দেওয়া ধন-সম্পদের বিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে…। ‘

‘ধনীর বিন্দু বিন্দু ধনের মধ্যেও রয়েছে গরীবের পাওনা। এটা তাদের প্রতি করুণা নয়; ওঁদের অধীকার। যাকাতের সুষ্ঠু বণ্টনের মধ্যে রয়েছে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করার অনন্যোপায় ।’

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমের মধ্যে বলেছেন,

“এসব জনপদের দখলমুক্ত করে যে জিনিসই আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে ফিরিয়ে দেন তা আল্লাহ, রসূল, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য । যাতে তা তোমাদের সম্পদশালীদের মধ্যেই কেবল আবর্তিত হতে না থাকে। রসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো । আল্লাহকে ভয় করো । আল্লাহ‌ কঠোর শাস্তিদাতা ।”
সুরা:- হাশর, আয়াত- ৭

‘যারা ধনী তাদের যাকাত দিতেই হবে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্রতা দিয়ে। কাউকে ধনী, কাউকে মধ্যবিত্ত, আবার কাউকে গরীব হিসেবে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর কাছে সবার মূল্য সমান । বরং ধনীর চেয়ে গরীব মানুষগুলোই তাঁর কাছে অত্যন্ত বেশি প্রিয়; যদি ধনীব্যক্তি আল্লাহ্‌ ভীরুতায় গরীব ব্যক্তিটির চাইতে উন্নত না হয়। গরীব মানুষগুলো যদি আল্লাহ তায়ালার বিধানাবলিতে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে আবৃত করতে পারে তবে তারা
ধনী ব্যক্তির অনেক পূর্বেই সিমাহীন শান্তিময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালোবাসেন, এজন্য ধনীরাও যদি মূল্যহীন সামাজিক অবস্থানকে পদদলিত করে তাদেরকে(গরীব) ঐ পরম স্রষ্টার প্রিয়তার জন্য ভালোবাসে তাহলে স্রষ্টা তাদেরকেও নহর বিশিষ্ট সুসজ্জিত উদ্যানের সুসংবাদ দিয়েছন। নতুবা অবর্ণনীয় শাস্তির স্থান জাহান্নাম।’

লেখাগুলো পড়া শেষ হলো। পড়ার পরে শিশিরের মনে কোথাথেকে জানি পবিত্র প্রশান্তি এসে ভরিয়ে তুলছে। হৃদয়ে লাগছে খুশির স্পর্শ । সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আগামীকাল থেকেই তার যাকাত মিশন শুরু হবে । তারপর সব নিয়মকানুন জেনে নিয়ে সারারাত জেঁগে তার সমস্ত সম্পদের প্রাথমিক গণনা শেষ করে, পরদিন প্রত্যুষেই রফিককে নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা

শিশির দাঁড়িয়ে আছে বস্তির একটা খুপছি ঘরের সামনে। গতকালের দেখা হওয়া সেই বৃদ্ধের বাড়ি এটা। গলা ঝাড়া দিতেই বাইরে বেরিয়ে এলেন বৃদ্ধ এবং উনার সহধর্মীনি । কথা বার্তার এক পর্যায় শিশির তাদেরকে প্রস্তাব দিলো যে, সে চায় বৃদ্ধ মানুষটি যেন আর রিকশা না চালান। একথা বলার পর বৃদ্ধ মুখ আঁধার করে জানতে চায়লেন তাদের তো দেখার কেউ নেই। তাহলে রিকসা না চালালে উনারা তো না খেয়ে থাকবেন। শিশির বলল যে এই বয়সে এতো কষ্ট করা তার দ্বারা অনেক বেশি কষ্টের তাই ও নিজ খরচে উনাদের একটা মুদী দোকান করে দিবে। আল্লাহ্ রহমত করলে তাতেই উনাদের জীবন-জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

বৃদ্ধব্যক্তিটি কোনভাবেই কারো করুণা গ্রহণ করতে রাজী নন । শিশির তাকে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত তেলাওয়াত করে শুনালো এবং বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘চাচা সংকোচ করবেননা, এটা করুণা নয়, বরং আপনার অধীকার, আমি আপনার আমানত যথাযথ ভাবে পৌঁছে দেবার একটা মাধ্যম মাত্র। মনে করুণ এগুলো দয়াময় আল্লাহ আমার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। আমি শুধু তা লালন করেছি। আজ আমি তা আপনাদের কাছ যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছি বলে আল্লাহ তায়ালার নিকট আমার জন্য একটু সাক্ষী দিলেই আমি কৃতজ্ঞ থাকব।

বৃদ্ধ ব্যক্তি হয়ত এতো কিছু বুঝতে পারেননি কিন্তু উনার চোখের কোণ ভিজে উঠলো। শিশির তাকে জড়িয়ে ধরেছিল আগেই। উনার চোখের জলের নিশ্চুপ ধারা শিশিরের ব্লেজার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে শিশির অনুভব করল ওর মন থেকে অবশিষ্ট বিন্দু বিন্দু অহমিকাও শত ক্রোশ দূরে হারিয়ে যাচ্ছে । বদলে সেই স্থান পূর্ণ হচ্ছে জান্নাতি সুখ ছোঁয়ার পবিত্র স্নিগ্ধতায় ।

এরপর থেকে শিশির প্রায়শই দূর-দূরান্তে ছুটে বেড়াই হৃতসর্বস্ব মানুষগুলোর খোঁজে । আর শুধু যাকাত নয়, নিজের আয় থেকেও গরীব মানুষ গুলোকে অকাতরে দান করতে থাকে অজ্ঞাতসারে, ক্রয় করতে থাকে অদৃষ্টপূর্ব জগতের জন্য স্থায়ী নিবাস ।

একথা আমাদের অশ্রুতপূর্ব নয় যে, যখন স্রষ্টার খুশির জন্য কেউ এককদম অগ্রসর হয়, স্রষ্টা তখন হৃষ্টমনে তার দিকে দশকদম অগ্রসর হন । সুবাহানআল্লাহ্ ! শিশির যখন তার মহৎ চিন্তাকে সামনে রেখে পা-বাড়ালো তখন স্রষ্টা তার বিবেক- বুদ্ধিকে প্রসারিত করে দিলেন। শিশির মানুষকে দু’পাঁচশো করে খয়রাত না করে ভবিষ্যতে যেন গ্রাহিতার আর কারো দারস্থ না হতে হয় সে জন্য ও একটা মাস্টারপ্লান করল । সে প্রত্যেককে তার অবস্থান অনুযায়ী সাবলম্বী হওয়ার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে লাগল । কাউকে মুদীখানার দোকান, কাউকে বা রিকশা, ভ্যান, কাউকে বা মাথা গুজার জন্য একফালি জমি, অথবা কারো কণ্যাদায়ে মুক্ত হস্তে দান করতে লাগলো ।

কিছু দিনের মধ্যেই তার মাঝে জেঁগে উঠল দানশীলতার এক অনন্য বৈশিষ্ট । সে খেয়াল করলো কোন এক অদৃশ্য বিশ্বাস তার মনে জায়গা করে নিতে লাগল এবং আস্তে আস্তে তার মনের সকল ক্রুটি বৃষ্টির জলের মতো ভেসে যেত লাগল। সে তার অধীকাংশ সময়গুলো দিতো ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে তার মন ছুটে চলছে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার নেশাই ..!
এবং এই নেশা তাকে সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে দিলো মসজিদের প্রথম কাঁতারে ।
পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ করার কারণে সে অনুভব করে তার হৃদয়ও পূর্ণ হতে থাকে পবিত্র নমনীয়তায় ।

ফজরের নামাজ আদায় করে শিশির তাদের ফুলের বাগানে বসে একাগ্রচিত্তে কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করছিলো । হঠাৎ একটা আয়াত পড়ে তার মনের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো ।

“শয়তান তোমাদের দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং কার্পণ্যের নির্দেশ দেয় । আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন । আল্লাহ্‌ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
সুরা বাকারা, আয়াত – ২৬৮

লেখক : ডি এইচ শিশির

পশ্চিম আকাশে কালোমেঘ গর্জন করছে । মৃদুলা বাতাসে জড়িয়ে থাকা হীম শীতলতা হয়ত জানান দিচ্ছে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে আসার আগমনীবার্তা। তা আচ করতে পেরে জানালার কাচ নামিয়ে দিয়ে একটু দূরে উল্টো পথের দিকে প্রসারিত দৃষ্টি মেলে থাকা শিশিরের উদ্দেশ্য করে রফিক বলল, ‘স্যার, তাড়াতাড়ি গাড়ীর মধ্যে আসুন নয়ত ভিজে যাবেন তো ।’

‘রফিক, তুমি গাড়ী নিয়ে চলে যাও। আমার ফিরতে হয়ত একটু দেরি হবে । তুমি আম্মাকে বলে দিও ।’ দূর দিগন্তে চোখ রেখেই বলল শিশির।

‘স্যার এই বৃষ্টি ভীষণ ভয়ানক। ভিজে গেলেতো আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন । আর মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সমস্যা আপনার হতে পারে ।’

‘উহ্ রফিক, কথা বাড়াবেনাতো । তুমি চলে যাও আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা । আমাকে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে । যার যার আমানত প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । তুমি বুঝবেনা কাঁধে আমার অনেক বেশি দায়িত্ব ।’ কয়েকমুহূর্ত থামল। তারপর তর্জনী দিয়ে সামনে ইশারা করে বলল, ‘আচ্ছা রফিক দেখ, ঐ যে দূরে একদল দিনমজুর কাজ করছে। বলতে পার তারাও কেন তোমার মতো এই একই চিন্তা করছে না? কেন তারা ভয়ে কাজ ফেলে উঠে আসছে না?’

রফিক কতক্ষণ নির্বাক চেয়ে রইল সেদিকে। তারপর বলল, ‘স্যার, তারা হলো দিনমজুর দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। একদিন কাজ না করলে হয়ত তাদের পরিবারবর্গকে না খেয়েই দিন কাটাতে হবে, তাই নিরুপায় হয়েই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের চোখে ভয় বলে কিছু যদি থেকেথাকে তাহলে হয়ত তা হলো তাদের ছোট্টছোট্ট ছেলেমেয়ের অনাহারী ছলছলে দৃষ্টি। তাই কাজই মুখ্য বাকি সব গৌণ তাদের কাছে।’

উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শিশিরের চোখ দুটি। হয়ত কাঙ্খিত উত্তরই পেয়েছে সে। সপ্রশংসক দৃষ্টিতে তাকাল রফিকের দিকে। বলল, ‘এক কঠিন বাস্তবতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে তুমি। আমার উত্তর ও এর মধ্যেই রয়েছে। তুমি জানো না রফিক, এক দুর্লঙ্ঘ্য গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে আসীন হয়ে আছে যার প্রতি আমি অবহেলিত। কিন্তু তা কতটুকু পালন করতে পারব তার উপরই নির্ভর করছে আমার পরকাল। তাই আমার অবস্থা আজ ঐ দিনমজুরগণের চেয়েও অতিশয় খারাপ। যাইহোক এতসব তুমি বুঝবেনা। তুমি এখন যাও, রফিক। সাবধানে যেও।’
কথা শেষ করেই হাঁটতে আরম্ভ করল শিশির।
সেদিকে তাকিয়ে আছে রফিক।

এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো শিশির খাঁন এবং তার ড্রাইভার রফিকের মাঝে ।
উপায় না পেয়ে রফিক খালি গাড়ি নিয়েই বাসার পথ ধরলো। হঠাৎ তার মুখে ফুঁটে উঠেছে বিজয়ীর এক চিলতে প্রশান্তচিত্ত হাসি। রফিক এটাই কামনা করছিল যে শিশির তাঁর কাঙ্খিত গন্তব্যে যাক। কিন্তু তাকে সাথে নিলে আরও বেশি খুশি হত। নিলো না। তবুও রফিক দুইহাত তুলে ধরলো দয়াময় আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে। ওঁ যেন নির্বিঘ্নে সেখানে পৌঁছাতে পারে সেজন্য প্রার্থনা করল। আর শিশির পা বাড়াল রেল লাইনের ওপারের বস্তির দিকে।

টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি একত্রিত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার গাল বেয়ে । আর তার নির্লিপ্ত চোখ এদিক ওদিকে নিগুড় পর্যবেক্ষণ করে ফিরছে রাস্তার আশে- পাশের নিঃস্ব-অসহায় মানুষ গুলির মর্মন্তুদ কর্মকান্ড।
খুব কাছ থেকে ও অনুভব করতে চেষ্টা করছে তাদের কষ্টগুলো। তাদের কষ্ট দেখে বুকের মধ্যে কোথাও হাল্কা মোচড় দিয়ে উঠলো। শিশিরের জন্য এই অনুভূতি একদম নতুন। নতুন কেন তা পরে বলব। সে একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের ঘর্মাক্ত মুখ পানে তাকাল । বৃষ্টিজলের মধ্যেই ঘর্মাক্তকলেবরে দিনমজুর মানুষগুলো কাজ করছে। শিশির আশ্চর্য হলো তাদের মুখে ক্লান্তিহীন এক অনন্য প্রশান্তির হাসি দেখে। হেসে হেসে কথাবলছে তারা। মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে এলো তাদের মতো ধনি শ্রেণীর মানুষগুলোর কথা যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে সময় কাটায়। কিন্তু মুখে কখনওই এমন নির্মল, অনাবিল হাসির শোভা দেখেনি শিশির।

বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে গেল ওর চেহারা। এলোমেলো চিন্তারা ভীড় করছে স্মৃতিপটে।
কিছু দূর আসতেই ওর নজরে এলো এই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রাস্তারপাশে রিকশার হুড তুলে একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক কোনরকমভাবে বৃষ্টি থেকে বাঁচার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছে। শিশির উনার কাছে গিয়ে সালাম দিলো। বৃদ্ধ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘স্যার, অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর যাত্রী হিসেবে আপনাকে পেলাম। কিন্তু দেখুন বয়স হয়েছে তাই ঠাণ্ডাজনিত কারণে বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা। তবুও চলুন। গরীবের আবার বৃষ্টিজল!’ বৃদ্ধ তার সিটে বসতে যাচ্ছিল, বাঁধা দিল শিশির। তারপর তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে কথা শুরু করল। বিভিন্নরকম কথা। একটা পর্যায় পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কিত কথা জানতে চায়লো। আরও কতক্ষণ কথা বলে সেদিনের মতো বাসায় ফিরে এলো। শিশির ফিরছিল আর বৃদ্ধ বিস্ময় বিমোহিত নয়নে সেদিকে চেয়ে ছিল।

পরদিন হাফ বেলা অফিসের কাজ করে একাই চলে এলো সেখানে। গতকালের সেই বৃদ্ধের কাছথেকে জেনে নেওয়া ঠিকানা তার গন্তব্য।

রেলপথের পাশদিয়ে সারি সারি ছোট ছোট খুপছি ঘর। দুইপাশে ঘরবাড়ী আর তার মাঝ দিয়ে এঁকেবেকে গেছে একটা সরু রাস্তা ।
রাস্তার মাঝে মধ্যে বড়বড় ভাঙা গর্ত। তাতে জমে আছে কতক বর্ষার জল আর তা ঘিরে বন বন করে উড়ছে মশা মাছি। এখানে ওখানে স্তূপ আকারে রাখা আছে ময়লা-আবর্জনা।
হাঁটছে শিশির মাঝে মাঝে দমকা বাতাসে হঠাৎ করেই নাকে এসে লাগছে বিকট দুর্গন্ধ।
এর আগে কখনো সে এমন পরিস্থিতির সামনে দাড়াইনি তবুও কোন এক অদৃশ্য নিশ্চয়তা তাকে সব বাঁধা উপেক্ষা করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। হৃদয়ে যেন আছড়ে পড়ছে অবিশ্রান্ত ঝর্ণার মতো প্রশান্তির কল্লোল ধারা।

আরো একটু ভিতরে প্রবেশ করতেই সে দেখলো বস্তির ছেলে-মেয়েরা তার পিছুপিছু আসছে আর একে অন্যকে দেখিয়ে বলছে,
– ‘এই দেখেছিশ লোকটার গা থেকে কত সুন্দর সুগন্ধ আসছে।’

তার কথায় পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে মুখে অনিন্দ্য হাসির রেখা টেনে বললো, ‘হবে না, উনি মনে হয় অনেকদামী সেন্ট মাখে । বকুলতলার মোড়ের দোকানে টিভিতে দেখায় । এরকম দামী জামা গায়ে দেওয়া লোকেরা মাখে আমি দেখেছি ।’

শিশির তাদের কথাই পিছু ফিরে তাকাই তারপর বাচ্চা দুটির মুখে আলতো স্পর্শ করে নাম জানতে চায়লো ।

বাচ্চা দুটিও হাসতে হাসতে নিজেদের নাম বলল। তাদের ফোকলা দাঁতের অনিন্দ্য হাসি দেখে খুশিতে নেচে ওঠে ওর মন। কথা শেষ করে বাচ্চা দুটি নিজেরা নিজেরা কথা বলতে লাগলো কিন্তু শিশিরের দৃষ্টি তখন অন্য দিগন্তে ।

ও ভাবতে শুরু করলো। অন্যরকম ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করতে লাগলো। সাঁ করে মনে পড়েগেল ছোট বেলাতে পরিবার থেকে পাওয়া ভ্রান্ত ধারনা গুলো ।

শিশির তখন অনেক ছোট। বাসা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাসা এই ছিলো তার চেনা পৃথিবী । চার দেয়ালের বন্ধঘরের অদৃশ্য বন্ধীর জীবন ছিলো ছোট্ট শিশিরের।

সে কখনো বাইরের জগতে মন খুলে বিচরণ করেনি। কখনো পায়নি সবুজ ঘাসে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশিরের স্পর্শ। কখনো পায়নি বিশাল দিগন্তের দর্শনি । এজন্য তাকে যা যতটুকু বোঝানো, শেখানো হয়েছে তার চিন্তাজগৎ ততটুকুর মাঝেই সিমা বদ্ধ ছিল। মুক্ত চিন্তার কোন অবকাশ ছিলনা ।

তার পরিবার বাংলার দশটা সেরা পরিবারের একটা। এজন্য সে বাইরের আনস্ট্যান্ডার্ড ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কে একে বারেই আইডীয়ালেসভাবে গড়ে উঠেছে । ধনে- জনে প্রতিপত্তি থাকলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার পরিবার সায়াহ্নের কালো আঁধারে নিমজ্জিত ।

তারই ফলশ্রুতিতে তাকে শেখানো হয়েছে গরীব নামের সংক্ষিপ্ত অর্থ। সে শৈশব থেকেই এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছে যে গরীব অসহায় মানুষগুলো খুব দুধর্ষ। তারা মাত্র এক মুঠো অন্নজলের জন্যে মানুষের জীবন পর্যন্ত অনায়াসে নিয়ে নিতে পারে। তাদের হাতের নাগালেই নাকি থাকে জীবন- মৃত্যুর মেলবন্ধন। এমনই সব ভ্রান্ত ধারণা তার মন- মননে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। একথা শুনার পর থেকে তার চিন্তা শুধু একটা সমীকরণ মেলাতে থাকে, ‘একমুঠো খাবার তো আমরা খুব সহজেই ডাস্টবিনে ফেলে দিই। কি হবে একবেলা না খেলে?
আমি খেতে চাইনা বলেই তো আম্মা প্রতিদিন রাগ করে। আর সেই একমুঠো খাবারের জন্য গরীবলোকগুলো কিনা একটা তরতাজা জীবন এক নিমিষে নিস্তেজ করেদিতে পারে! যারা এমনটা করতে পারে তারা নিশ্চয় অসভ্যতা আর বর্বরতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেছে।’

তার সঙ্কীর্ণ ভাবনা-চিন্তা এখানেই মিলিয়ে যায় কিন্তু এই বিশ্বাসটা তখন থেকেই তার হৃদয়ে গেঁথে যায়। মূল কথা হলো, একবেলা দুই বেলা নয়, একাধারে তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা যে ভোগ করেনি। সে কেমন করে বুঝবে অনাহারীর ক্ষুব্ধতা? তার চিন্তা কখনওই ভুক্তভুগির বাস্তব অভিজ্ঞতা স্পর্শ করতে পারবেনা।

এরপর, আজ সে বড় হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার ব্যবসার হালও ধরতে হয়েছে তাকে। ছোট্ট শিশির আজ বুদ্ধি- বিদ্যায় ও অনেক বড় হয়েছে কিন্তু তার মনে গরীবদের প্রতি সেই ঘৃণ্য দৃষ্টি রয়েই গেছে। সে তাদের গরীব শ্রমিকদের কথা কখনওই মনোযোগ দিয়ে শুনতনা। কখনো উপলব্ধি করতে চায়তনা তাদের দুঃখ। সব সময় তাদের থেকে দূরে দূরে থাকতো।

এরই মাঝে এলো শিশিরের জন্মদিন। সারাদিন বাসায়, অফিসে নানান পার্টি, অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিনের সমাপ্তি ঘটে আর নেমে আসে রাতের ঘনীভূত আঁধার। জমকালো ঝাড়বাঁতীর দ্যুতিতে সে আঁধার সহস্র ক্রোশ দূরে চলে গেলো। ঝলমলে হয়ে উঠলো সবকিছু।

জন্মদিন উপলক্ষে প্রচুর উপহার জমা হলো। নানান জনের নানানরকম উপহার।
স্তূপাকার দামী দামী উপহারের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার নজর কাড়ল সস্তা পেপারে মোড়ানো নীল রঙের একটা উপহার প্যাক। তার উপর রাখা আছে একটা টাটকা গোলাপ ফুল। হয়ত কেউ এখনই, এইমাত্র রেখে গেছে। ফুল থেকে যেন রাতের স্নিগ্ধ শিশির চুইয়ে পড়ছে। ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের উপর ঝাড়বাতির আলোকরশ্মি পড়ে মুক্তার মতো চিকচিক করছে। ফুলটা তুলে হাতে নিল শিশির। ভালো লাগার এক প্রস্রবণধারা বয়েগেল তার বুকের মধ্যে।

বেনামি উপহারটি হাতে নিল। হাতে তুলে নিয়ে বেশ কৌতূহল নিয়ে খুললো সেটা। দেখল, দুইটা বই আছে তার মধ্যে । ড্রিংক করার কারণে সে কিছুটা অস্বস্তি অনূভব করছিল তাই ঘোরের মধ্যেই কিছুটা রাগে বইগুলো দূরে ছুড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই কয়েকটি অক্ষরের দিকে চোখ পড়াতে ও চমকে উঠল। হাত দুটি স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে বই দুটি জড়িয়ে ধরল বুকের সাথে। আমরা বাঙালীরা আর যাইহোক আরবী লেখা দেখলে বেশ সতর্কীকৃত ভাবে তা সংরক্ষণ করি এই ভেবে যে, এর সাথে অসদাচরণে আল্লাহ্‌ রাগান্বিত হবেন। তখন ‘আবার হাত পা পচে টচে যায়কিনা!’
সেও চোখেমুখে কতক সেইরকম এই ভীতি নিয়েই বইটা সযত্নে মাথার কাছে রেখে নিদ্রা গেলো ।

কি জানি কি হলো? রাতের মধ্যপ্রহরে শিশিরের ঘুম ভেঙে গেলো। চারিদিক নিশুতি নীরবতা । হঠাৎ করে ওর দৃষ্টি গেল বালিসের দিকে। অনুভূত হলো জাজ্বল্যমান একটা বইয়ের নাম ‘ইসলামি অর্থনীতি এবং যাকাত’ । বিষয়টা স্বাভাবিক হলেও ও অকস্মাৎ চমকে উঠলো।

‘ইসলাম মানে তো জানতাম শুধু নামাজ-কালাম, যিকর-আজগার, তসবিহ-তাহলীল কিন্তু আজ দেখছি ইসলামি অর্থনিতী! এটা আবার এলো কোথা থেকে? প্রনয়ণই বা করলো কে? ভারি জটিল প্রশ্নতো! আগে তো এমনটা দেখিনি।’
মনে মনেই কথাবলে উঠল শিশির। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল। ও প্রচন্ড বইপোকা স্বভাবের অফিসেরছুটির সময়গুলো কাটে বইপড়ার মধ্য দিয়ে। তাই এমন নতুন ধাচের বই পেয়ে জগতের সব কৌতূহল নিয়ে বইটি হাতে নিল।

ও কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মোড়কের দিকে চেয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে মেলতে লাগল পৃষ্ঠা। পড়ছে শিশির। একলাইন, দুইলাইন, তিনলাইন; একপৃষ্ঠা, দুইপৃষ্ঠা তিন পৃষ্ঠা..! আগ্রহ যেন বেড়েই চলেছে। কোন এক অদৃশ্য আকাঙ্খা তাকে বইয়ের মাঝে ডুবিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। প্রতিটি শব্দগুচ্ছ পর্যন্ত গভীর মনযোগ সহকারে পড়তে লাগলো ও। অনেকক্ষণ ধরে পড়ল।

পড়ার এক পর্যায় তার মনের আকাশ ভয়ের নিকষকালো আঁধারে ছেয়ে গেলো। রাজ্যের চিন্তারা এসে ভিড় করল তার স্নায়ুতে। মাথার উপর অনবরত ঘুরছে ফ্যান। মিডিয়াম কাঁটায় চলছে এয়ারকণ্ডিশন কিন্তু তা শর্তেও ওর পশমের গোড়া দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেরহয়ে আসতে লাগল। আজ সে যা পড়লো তা সত্য হলে তার পূর্বপুরুষগণ হয়ত এত দিন জাহান্নামের কোন অন্ধকারে দিনযাপন করছে; ভাবছে শিশির।
সে এবং তার গরীব মানুষদের সাথে কোন ভাবেই মনখুলে মেলামেশা করেনা। কিন্তু বইয়ের ভাষা বলছে তাদের কৃতকর্মে বিপরীত। বলা হচ্ছে ধনী- গরীব নির্বিশেষে সবার সাথে উত্তম সম্পর্ক গড়ার কথা; কিন্তু তারা তো সবসময় ওঁদের এড়িয়ে চলে। তাছাড়া শিশিরের পূর্বপুরুষদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিতি ছিল উপচিকীর্ষার ।

অজানা ভয় তাকে আড়ষ্ট করে ফেলছে। নিশুতি রাতের নীরবতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বেশি বিগলিত হয়ে নুইয়ে পড়ছে ওর হৃদয়। পূর্ণিমাচাঁদের মুখে এক ফোঁটা আঁধারের প্রলেপ এঁকে দিলে যেমন আদিগন্ত জুড়ে মুষড়ে পড়া- বিধস্ততা প্রতীয়মান হতো তেমনই হয়েছে ওর শান্ত- সরল মুখখানি ।

হঠাৎ আঁধারের বুকে এক ফোঁটা আলোকরশ্মির মতো হয়ে উঠলো ওর চেহারা। ছড়িয়ে গেল এক পবিত্র উজ্জ্বলতা।
মনে পড়ে গেল রফিকের বলা কথাগুলো। শিশিরের এক কঠিন বিপদের দিনে রফিক তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল যে, ‘যখন পৃথিবীর সমস্ত দরজা কারো জন্য বন্ধ হয়ে যায় তখনও তার জন্য খোলা থাকে মহান রবের সুপ্রসন্ন দরজা। তার মতো দয়ার আর কেউ নেই। তিনি মানুষের জন্য অনুগ্রহ করাকে নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিয়েছেন। এজন্য যতবার তিনি ভয়ঙ্কর শাস্তিবিধানকারীরূপে আসার কথা বলেছেন ততবারই তার পাশে রহিম, রহমান নামক গুণবাচক নামগুলিও ব্যবহার করেছেন। এজন্য বিপদে ভয় না পেয়ে প্রভুকে ডাকবেন; উনিই একমাত্র যাবতীয় বিপদকালে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।

সে একদিন আরও বলেছিল আল্লাহ্ তায়ালা সবচাইতে খুশি হন তখন, যখন সত্যপথ বিচ্যুত কোন বান্দা তাঁর পথে ফিরে আসে; নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর যে ভুল করে নতমস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে পছন্দ করেন।’
ড্রাইভার রফিকে সেই কথাগুলোই আজ ওর দুচোখে আশার আলোর হয়ে ধরা দিলো।

এই নিস্তব্ধ রাতে তার খুব বেশি স্মরণ হতে লাগলো আল্লাহ্ তায়ালাকে। অকপটে নিজের এবং পূর্বপুরুষদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা আর অনুগ্রহ চাইতে লাগলো। সে ভাবতে লাগলো, কি করল তার পরিবার! এমন চরম সত্যকে তারা কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারল? শিক্ষা দীক্ষায় অনন্য ছিল তার পূর্বপুরুষ। তবুও তারা সত্য দ্বীন, দ্বীনের চাওয়াগুলো বুঝতে পারল না! অস্ফুট এক আর্তনাদ বের হয়ে এলো বুকচিরে।

হঠাৎ ওর মনে অজানা ভয় এসে বাসা বাঁধতে লাগলো। ভাবতে লাগলো, সত্যিইতো মানুষে দ্বারা একটি সেকেন্ডের ও তো গ্যারান্টি নেই। তাহলে যদি আমি এইমুহূর্তে মৃত্যুবরণ করি!
তাহলেতো আমার সাথে একটি কানা কড়িও নিয়ে যেতে পারবনা। তখন এত ধন দৌলত খাবে কে? আমার আহল- পরিজন এই সম্পদ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে যার যার মতো করে হেসে খেলে জীবন পরিচালনা করবে।
কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাচ্ছি? অথবা পাব? বইয়ের কথাগুলিকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে ফলাফল আসবে যে, আমার রেখে যাওয়া বংশধররা যদি বিন্দুমাত্র ভাল কাজ করে তাহলে তা যেমন আমার আমলনামাই যোগ করা হবে ঠিক তেমনি ভাবে তাদের শস্যকণা পরিমাণ খারাপ কাজের ভাগও বাদ যাবেনা।
মৃত্যুরপরে আমার রেখে যাওয়া ধন- সম্পদ বিষাক্ত সর্প হয়ে আমাকে দংশন করবে!
কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
সেই একটি সাপ যদি দুনিয়ার বুকে একবার নিঃশ্বাস ফেলে তবে অনন্তকালের জন্য কখনওই আর সবুজ গাছপালা জন্মাবেনা!

ভয় যুক্ত অনুশোচনায় মাথা নুইয়ে পড়ছে তার। তাই অশ্রু সজল আঁখি নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ জানাতে লাগলো, ‘হে প্রভূ আমাকে অন্তত এই ঋনের বোঝা থেকে মুক্তিপাওয়ার আগপর্যন্ত দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিওনা। আমার পরিবার সারাজীবন ভুল করেছে কিন্তু আমি আর তা করতে চাইনা। দয়াকরে আমাকে সুযোগদানে বাধীত করুণ।’

যাকাত না দিলে মহান আল্লাহু তায়ালা মানুষকে শাস্তি দিবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। সে ভাবতে লাগল কী এই যাকাত? যা আদায় না করলে মহান প্রভূর নিকট এমন অবশ্যম্ভাবী ভাবে জবাবদিহিতা
করতে হবে।
কেন দিতে হবে?
কী করা হবে এই টাকা দিয়ে?
কাকেই বা দিতে হবে?
একের পর এক প্রশ্ন এসে তার মস্তিষ্কে ট্রাফিক জ্যাম বাঁধাতে লাগলো। সে মাথায় হাত দিয়ে বেডের উপর বসে পড়ল।
হঠাৎ তার খেয়াল হলো পাশে রাখা দ্বিতীয় বইটির কথা। সাথে সাথে ছোঁ মেরে বইটি হাতে তুলে নিলো। চরম উৎকন্ঠা নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগল । এক পৃষ্ঠাই এসে তার চোখ আটকে গেল অনন্য প্রাপ্তিতে উজ্জ্বল উঠলো চোখ মুখ। এই পাতাই সব কিছু
আল-কোরআনের রেফারেন্সে লেখা। সে তার উপরোক্ত প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তরগুলো ক্রমান্বয়ে সাঁজালো শিশির।

‘যাকাত হলো এমন একটা অর্থ ব্যাবস্থার মূলনীতি যা প্রণয়ন করেছেন সয়ং সৃষ্টিকর্তা । ধনী ব্যক্তিগণ যাকাতের মাধ্যমে প্রভূর দেওয়া ধন-সম্পদের বিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে…। ‘

‘ধনীর বিন্দু বিন্দু ধনের মধ্যেও রয়েছে গরীবের পাওনা। এটা তাদের প্রতি করুণা নয়; ওঁদের অধীকার। যাকাতের সুষ্ঠু বণ্টনের মধ্যে রয়েছে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করার অনন্যোপায় ।’

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমের মধ্যে বলেছেন,

“এসব জনপদের দখলমুক্ত করে যে জিনিসই আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে ফিরিয়ে দেন তা আল্লাহ, রসূল, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য । যাতে তা তোমাদের সম্পদশালীদের মধ্যেই কেবল আবর্তিত হতে না থাকে। রসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো । আল্লাহকে ভয় করো । আল্লাহ‌ কঠোর শাস্তিদাতা ।”
সুরা:- হাশর, আয়াত- ৭

‘যারা ধনী তাদের যাকাত দিতেই হবে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্রতা দিয়ে। কাউকে ধনী, কাউকে মধ্যবিত্ত, আবার কাউকে গরীব হিসেবে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর কাছে সবার মূল্য সমান । বরং ধনীর চেয়ে গরীব মানুষগুলোই তাঁর কাছে অত্যন্ত বেশি প্রিয়; যদি ধনীব্যক্তি আল্লাহ্‌ ভীরুতায় গরীব ব্যক্তিটির চাইতে উন্নত না হয়। গরীব মানুষগুলো যদি আল্লাহ তায়ালার বিধানাবলিতে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে আবৃত করতে পারে তবে তারা
ধনী ব্যক্তির অনেক পূর্বেই সিমাহীন শান্তিময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালোবাসেন, এজন্য ধনীরাও যদি মূল্যহীন সামাজিক অবস্থানকে পদদলিত করে তাদেরকে(গরীব) ঐ পরম স্রষ্টার প্রিয়তার জন্য ভালোবাসে তাহলে স্রষ্টা তাদেরকেও নহর বিশিষ্ট সুসজ্জিত উদ্যানের সুসংবাদ দিয়েছন। নতুবা অবর্ণনীয় শাস্তির স্থান জাহান্নাম।’

লেখাগুলো পড়া শেষ হলো। পড়ার পরে শিশিরের মনে কোথাথেকে জানি পবিত্র প্রশান্তি এসে ভরিয়ে তুলছে। হৃদয়ে লাগছে খুশির স্পর্শ । সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আগামীকাল থেকেই তার যাকাত মিশন শুরু হবে । তারপর সব নিয়মকানুন জেনে নিয়ে সারারাত জেঁগে তার সমস্ত সম্পদের প্রাথমিক গণনা শেষ করে, পরদিন প্রত্যুষেই রফিককে নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা

শিশির দাঁড়িয়ে আছে বস্তির একটা খুপছি ঘরের সামনে। গতকালের দেখা হওয়া সেই বৃদ্ধের বাড়ি এটা। গলা ঝাড়া দিতেই বাইরে বেরিয়ে এলেন বৃদ্ধ এবং উনার সহধর্মীনি । কথা বার্তার এক পর্যায় শিশির তাদেরকে প্রস্তাব দিলো যে, সে চায় বৃদ্ধ মানুষটি যেন আর রিকশা না চালান। একথা বলার পর বৃদ্ধ মুখ আঁধার করে জানতে চায়লেন তাদের তো দেখার কেউ নেই। তাহলে রিকসা না চালালে উনারা তো না খেয়ে থাকবেন। শিশির বলল যে এই বয়সে এতো কষ্ট করা তার দ্বারা অনেক বেশি কষ্টের তাই ও নিজ খরচে উনাদের একটা মুদী দোকান করে দিবে। আল্লাহ্ রহমত করলে তাতেই উনাদের জীবন-জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

বৃদ্ধব্যক্তিটি কোনভাবেই কারো করুণা গ্রহণ করতে রাজী নন । শিশির তাকে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত তেলাওয়াত করে শুনালো এবং বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘চাচা সংকোচ করবেননা, এটা করুণা নয়, বরং আপনার অধীকার, আমি আপনার আমানত যথাযথ ভাবে পৌঁছে দেবার একটা মাধ্যম মাত্র। মনে করুণ এগুলো দয়াময় আল্লাহ আমার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। আমি শুধু তা লালন করেছি। আজ আমি তা আপনাদের কাছ যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছি বলে আল্লাহ তায়ালার নিকট আমার জন্য একটু সাক্ষী দিলেই আমি কৃতজ্ঞ থাকব।

বৃদ্ধ ব্যক্তি হয়ত এতো কিছু বুঝতে পারেননি কিন্তু উনার চোখের কোণ ভিজে উঠলো। শিশির তাকে জড়িয়ে ধরেছিল আগেই। উনার চোখের জলের নিশ্চুপ ধারা শিশিরের ব্লেজার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে শিশির অনুভব করল ওর মন থেকে অবশিষ্ট বিন্দু বিন্দু অহমিকাও শত ক্রোশ দূরে হারিয়ে যাচ্ছে । বদলে সেই স্থান পূর্ণ হচ্ছে জান্নাতি সুখ ছোঁয়ার পবিত্র স্নিগ্ধতায় ।

এরপর থেকে শিশির প্রায়শই দূর-দূরান্তে ছুটে বেড়াই হৃতসর্বস্ব মানুষগুলোর খোঁজে । আর শুধু যাকাত নয়, নিজের আয় থেকেও গরীব মানুষ গুলোকে অকাতরে দান করতে থাকে অজ্ঞাতসারে, ক্রয় করতে থাকে অদৃষ্টপূর্ব জগতের জন্য স্থায়ী নিবাস ।

একথা আমাদের অশ্রুতপূর্ব নয় যে, যখন স্রষ্টার খুশির জন্য কেউ এককদম অগ্রসর হয়, স্রষ্টা তখন হৃষ্টমনে তার দিকে দশকদম অগ্রসর হন । সুবাহানআল্লাহ্ ! শিশির যখন তার মহৎ চিন্তাকে সামনে রেখে পা-বাড়ালো তখন স্রষ্টা তার বিবেক- বুদ্ধিকে প্রসারিত করে দিলেন। শিশির মানুষকে দু’পাঁচশো করে খয়রাত না করে ভবিষ্যতে যেন গ্রাহিতার আর কারো দারস্থ না হতে হয় সে জন্য ও একটা মাস্টারপ্লান করল । সে প্রত্যেককে তার অবস্থান অনুযায়ী সাবলম্বী হওয়ার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে লাগল । কাউকে মুদীখানার দোকান, কাউকে বা রিকশা, ভ্যান, কাউকে বা মাথা গুজার জন্য একফালি জমি, অথবা কারো কণ্যাদায়ে মুক্ত হস্তে দান করতে লাগলো ।

কিছু দিনের মধ্যেই তার মাঝে জেঁগে উঠল দানশীলতার এক অনন্য বৈশিষ্ট । সে খেয়াল করলো কোন এক অদৃশ্য বিশ্বাস তার মনে জায়গা করে নিতে লাগল এবং আস্তে আস্তে তার মনের সকল ক্রুটি বৃষ্টির জলের মতো ভেসে যেত লাগল। সে তার অধীকাংশ সময়গুলো দিতো ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে তার মন ছুটে চলছে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার নেশাই ..!
এবং এই নেশা তাকে সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে দিলো মসজিদের প্রথম কাঁতারে ।
পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ করার কারণে সে অনুভব করে তার হৃদয়ও পূর্ণ হতে থাকে পবিত্র নমনীয়তায় ।

ফজরের নামাজ আদায় করে শিশির তাদের ফুলের বাগানে বসে একাগ্রচিত্তে কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করছিলো । হঠাৎ একটা আয়াত পড়ে তার মনের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো ।

“শয়তান তোমাদের দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং কার্পণ্যের নির্দেশ দেয় । আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন । আল্লাহ্‌ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
সুরা বাকারা, আয়াত – ২৬৮

Share with Friends

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top